আহ্নিক গতির ফল (The results of Rotation)

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ভূগোল ও পরিবেশ - মহাবিশ্ব ও আমাদের পৃথিবী | | NCTB BOOK

: পৃথিবীর আহ্নিক গতির কারণে যেসব পরিবর্তন আমরা দেখতে পাই তা হলো-

১। পৃথিবীতে দিবারাত্রি সংঘটন : পর্যায়ক্রমে দিনরাত্রি সংঘটিত হওয়া পৃথিবীর আহ্নিক গতির একটি ফল। আমরা জানি পৃথিবী গোল এবং এর নিজের কোনো আলো নেই। সূর্যের আলোতে পৃথিবী আলোকিত হয়। আবর্তন গতির জন্য পৃথিবীর যেদিক সূর্যের সামনে আসে, সেদিক সূর্যের আলোতে আলোকিত হয়। তখন ঐ আলোকিত স্থানসমূহে দিন। আলোকিত স্থানের উল্টা দিকে অর্থাৎ পৃথিবীর যেদিকটা সূর্যের বিপরীত দিকে, সেখানে সূর্যের আলো পৌঁছায় না, সেদিকটা অন্ধকার থাকে। এসব অন্ধকার স্থানে তখন রাত্রি। পৃথিবীর পর্যায়ক্রমিক আবর্তনের ফলে আলোকিত দিকটি অন্ধকারে আর অন্ধকারের দিকটি সূর্যের দিকে বা আলোকে চলে আসে। ফলে দিনরাত্রি পাল্টে যায়। অন্ধকার স্থানগুলো আলোকিত হওয়ার ফলে এসব স্থানে দিন হয়। আর আলোকিত স্থান অন্ধকার হয়ে যাওয়ার ফলে ঐসব স্থানে রাত হয়। এভাবে পর্যায়ক্রমে দিনরাত্রি সংঘটিত হতে থাকে, কোনো স্থানে ১২ ঘণ্টা দিন ও ১২ ঘণ্টা রাত্রি হয়।

২। জোয়ার-ভাটা সৃষ্টি : আহ্নিক গতির ফলেই জোয়ার-ভাটা সংঘটিত হচ্ছে। আমরা দেখি প্রতিদিন জোয়ার-ভাটা একই সময়ে হচ্ছে না। আজকে জোয়ার যে স্থানে যে সময়ে হচ্ছে পরের দিন সেই সময়ে না হয়ে তার ৫২ মিনিট পরে হচ্ছে। এই যে সময়ের ব্যবধান সেটা আহ্নিক গতির কারণেই হচ্ছে।

৩। বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি : পৃথিবীর অভিগত গোলকের কারণে নিরক্ষরেখা থেকে উভয় মেরুর দিকে অক্ষরেখাগুলোর পরিধি ও পৃথিবীর আবর্তনের গতিবেগ ক্রমশ কমতে থাকে। এসব কারণে পৃথিবীর বায়ুপ্রবাহ বা সমুদ্রস্রোতের গতির দিক সরাসরি উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে না হয়ে উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়।

৪। তাপমাত্রার তারতম্য সৃষ্টি : দিনের বেলায় সূর্যের কিরণ থাকার কারণে তাপমাত্রা বেশি থাকে। রাত হলে তাপ বিকিরণ করে তাপমাত্রা কমে যায়। যদি আহ্নিক গতি না থাকত তাহলে এভাবে দিনের পর রাত আসত না এবং তাপমাত্রার তারতম্য সৃষ্টি হতো না। এই তাপমাত্রার তারতম্য হলো আহ্নিক গতির একটি ফল।

৫। সময় গণনা বা সময় নির্ধারণ : আহ্নিক গতির ফলে সময়ের হিসাব করতে সুবিধা হয়। একবার সম্পূর্ণ আবর্তনের সময়ের ২৪ ভাগের এক ভাগকে ঘণ্টা ধরে তার ৬০ ভাগের ১ ভাগকে মিনিট। মিনিটের ৬০ ভাগের ১ ভাগকে সেকেন্ড এভাবে সময় গণনা করা হয়।

৬। উদ্ভিদ ও প্রাণিজগৎ সৃষ্টি : পৃথিবীর আবর্তনের কারণেই পৃথিবীর সব জায়গায় পর্যায়ক্রমে সূর্যালোক পড়ে এবং দিনরাত্রি হয়। উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্য সূর্যালোকই বেশি প্রয়োজন। দিনের বেলায় সূর্যালোক থেকে শক্তি সঞ্চয় করে এবং রাতে ঐ শক্তি নিজেদের শারীরবৃত্তীয় কাজে লাগায়। কোনো প্রাণী দিনে আবার কোনো প্রাণী রাতে খাদ্য সংগ্রহ করে। পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে দিনরাত্রি সংঘটিত হয় তার উপরই উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের নিয়মশৃঙ্খলা অনেকখানি নির্ভর করে। 

Content updated By
Promotion